আশুলিয়ায় নিজ স্কুলের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতো দশম শ্রেণির এক ছাত্র (১৬)। একইসঙ্গে তার চলাফেরা ছিল উচ্ছৃঙ্খল। এসব কারণে ওই স্কুলের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার ছাত্রকে শাসন করেছিলেন।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষককে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে ওই ছাত্র। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
সোমবার (২৩ জুন) রাতে এসব কথা জানিয়েছেন নিহতের ভাই অসীম কুমার সরকার। নিহত উৎপল কুমার সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার এলংজানী গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ১০ বছর ধরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা করছিলেন। একই স্কুলের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ছিলেন।
অন্যদিকে অভিযুক্ত ছাত্র ওই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণির ছাত্র ও আশুলিয়ার চিত্রাশাইল এলাকার বাসিন্দা।
স্কুলের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসানসহ একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, গত শনিবার দুপুরে স্কুলে ছাত্রীদের ক্রিকেট খেলা চলছিল। শিক্ষক উৎপল কুমার মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিলেন। স্কুলের দোতলা থেকে খেলা দেখছিল ওই ছাত্র। হঠাৎ দোতলা থেকে নেমে মাঠ থেকে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষকের মাথায় আঘাত করে। সেইসঙ্গে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে নারী ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যান সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা।
অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
নিহত শিক্ষকের ভাই অসীম কুমার বলেন, আমাদের আট ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট উৎপল। লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষকতা শুরু করে। গত কয়েক বছর ধরে আশুলিয়ার ওই স্কুলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষকের পাশাপাশি শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিল। ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত ও উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরা করার কারণে ওই ছাত্রকে শাসন করেছে।
সে কারণে ক্ষুব্ধ আমার ভাইকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। শাসন করলে যদি কোনও শিক্ষককে এভাবে মেরে ফেলা হয়, তাহলে এই পেশায় আসতে অনেকে ভয় পাবেন। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। ভাইকে হত্যার বিচার চাই।
তিনি বলেন, গ্রামের বাড়ি উল্লাপাড়ায় সোমবার রাতে ভাইয়ের শেষকৃত্য হয়েছে। ভাইকে হারিয়ে পরিবারের সবাই বাকরুদ্ধ। কান্না করতে করতে আমার বৃদ্ধা মা গীতা রানী অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন।
স্কুলের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেন, নিহত শিক্ষক শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হওয়ায় স্কুলের সব শিক্ষার্থীকে আচরণ ও চলাফেরা নিয়ে কাউন্সেলিং করতেন। অভিযুক্ত ছাত্র স্কুলের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত ও বিশৃঙ্খলা করতো। এসব কারণে তাকে শাসন করায় ক্ষুব্ধ হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক বলেন, এ ঘটনায় নিহতের ভাই অসীম কুমার বাদী হয়ে ওই ছাত্রকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। মামলায় আরও দুই-তিন জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে ওই স্কুলছাত্র ও তার পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছে। অভিযুক্ত আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।